আমরা যারা ব্যাংকিং সিস্টেমের সাথে জড়িত তাদের কাছে Visa Card, Master Card, Credit Card এই কার্ডগুলো যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। যেকোনো ATM Booth থেকে টাকা উত্তোলন করা, কিংবা CRM ব্যবহার করে টাকা জমা দেয়া, অথবা PoS Machine ব্যবহার করে কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে এই কার্ডগুলোই বহুল ব্যবহৃত হয়। তবে এই কার্ডগুলোর সাথে বর্তমানে নাম লিখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশে এই প্রথম চালু হওয়া “Taka Pay Card”। ২০২৩ সালের ১লা নভেম্বর এই কার্ডটির উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Taka Pay Card কী?
Taka Pay Card হচ্ছে এমন একটি কার্ড যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত এবং এই কার্ড ব্যবহার করে আপনি কম খরচে Visa Card সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন দেশের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো কাজে। অর্থাৎ Visa card এর বদলে এখন থেকে নিজস্ব দেশীয় কার্ড ব্যবহার করা যাবে।
Visa card এবং Master card এর মতো আন্তর্জাতিক কার্ড নেটওয়ার্কের উপর নির্ভরতা কমাতেই মূলত TakaPay চালু করা হয়েছে। এই উদ্যোগটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। TakaPay-এর লক্ষ্য হলো একটি নিরাপদ স্থানীয় লেনদেন চালু করা এবং ভবিষ্যতে টাকা-রুপী কার্ড চালু করারও পরিকল্পনা রয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে বিশেষ করে ভারতের সাথে আন্তঃসীমান্ত লেনদেন সহজতর করবে।
Taka Pay Card কীভাবে সংগ্রহ করবো?
Taka Pay Card টি বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এবং তাদের নির্দেশ অন্যযায়ী দেশের ৩ টি ব্যাংক এই কার্ডটি ইস্যু করছে। সেই ৩ টি ব্যাংক হলো-
- সোনালী ব্যাংক
- ব্র্যাক ব্যাংক এবং
- সিটি ব্যাংক
TakaPay ব্যবহার করতে আপনার একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন হবে৷ এখন পর্যন্ত, এই সুবিধাটি কেবল ডেবিট কার্ড ব্যবহারকারীদের প্রদান করা হচ্ছে। বিদ্যমান অ্যাকাউন্টধারীরা তাদের লিঙ্ক করা ডেবিট কার্ড স্থগিত করে TakaPay-তে স্যুইচ করতে পারবেন। সরকারের মতে, TakaPay দেশব্যাপী ATM, Point of Sale (PoS) এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিতে ব্যাপকভাবে গৃহীত হবে।
ভবিষ্যতে, আরও পাঁচটি ব্যাংক এই কার্ড ইস্যু করতে পারবে। সেগুলো হলো-
- ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক
- ইস্টার্ন ব্যাংক
- ইসলামি ব্যাংক
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।
Taka Pay Card এর পরিকল্পনা কি কি?
- TakaPay কার্ডের মূল লক্ষ্যই হল বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইলেকট্রনিক লেনদেনের জন্য একটি সুবিধাজনক মাধ্যম হিসেবে কাজ করা।
- সরকারের লক্ষ্য হল ভিসা এবং মাস্টারকার্ডের মতো আন্তর্জাতিক কার্ড নেটওয়ার্কের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা, যাতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কম হয়।
- উপরন্তু, এটির লক্ষ্য 'ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অফ বাংলাদেশ'-এর মাধ্যমে স্থানীয় অর্থপ্রদান পরিচালনার জন্য একটি নিরাপদ পদ্ধতি প্রদান করা, অভ্যন্তরীণ আর্থিক লেনদেনকে সুবিন্যস্ত করা।
বাংলাদেশে TakaPay এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, অধ্যাপক রাদ মজিব লালন, সহযোগী অধ্যাপক, ব্যাংকিং এবং বীমা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলেন,
"TakaPay আমাদের অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম এবং ইলেকট্রনিক লেনদেনের জন্য একটি যুগান্তকারী সূচনা। এটি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর বোঝা কমিয়ে দেবে।"
অধ্যাপক লালনের মতে, TakaPay বাংলাদেশের GDP (Gross Domestic Product) বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতে, তার সরকার দুর্নীতি কমাতে, উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এবং রাজস্ব আদায় সহজ করতে একটি নগদবিহীন সমাজ গড়ে তুলতে চায়। তিনি বলেন,
“যখন আমরা একটি নগদবিহীন সমাজ গড়তে সক্ষম হব, তখন তা দুর্নীতিকে কমিয়ে দেবে। দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং রাজস্ব আহরণ সহজ হবে।”
Taka Pay Card এর চ্যালেঞ্জগুলো কি কি?
যেহেতু স্থানীয় মুদ্রার কার্ডটি বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হয়, তাই সাম্প্রতিক লঞ্চের কারণে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ। যেকোনো প্রকার লঙ্ঘন রোধ করার জন্য বাংলাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিকভাবে, এই ধরনের ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেমে অত্যন্ত উন্নত নিরাপত্তা প্রোটোকল রয়েছে, এবং বাংলাদেশের এই দিকটিতে আপস করা উচিত নয়। নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়মিত আপডেট করা অপরিহার্য।
Taka PAy Card এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টাকাপে-এর উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। সোনালী ব্যাংকের দুজন মুক্তিযোদ্ধা গ্রাহক টাকাপে কার্ড ব্যবহার করে সিটি ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন।
ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভিসা এবং মাস্টারকার্ড পেমেন্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে টাকার বৈদ্যুতিক স্থানান্তর করা হয়। এই সংস্থাগুলো ক্রেডিট, ডেবিট এবং প্রিপেইড কার্ডগুলোর জন্য ব্র্যান্ডেড পেমেন্ট প্রক্রিয়াকরণ পরিসেবা প্রদান করে থাকে৷ ডমেস্টিক কার্ড 'Taka Pay' একই সেবা দেবে বলে জানিয়েছে BB।
বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশে তাদের নিজস্ব মুদ্রা কার্ড রয়েছে। শ্রীলঙ্কা 'Lankapay' ব্যবহার করে, পাকিস্তান 'Pakpay' ব্যবহার করে, ভারত 'RuPay' কার্ড ব্যবহার করে এবং সৌদি আরবে 'মাদা' ব্যবহার করা হয়। এখন বাংলাদেশের Taka Pay card টি কতটুকু ফলপ্রসূ হয় সেটাই দেখার বিষয়!
0 Comments